হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, নাজফ আল আশরাফের গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী হুসাইনী সিস্তানী সাহেবের কার্যালয় থেকে ১৪৩৯ হিজরীর মহার্রাম মাস উপলক্ষে খতিব, যাকির, নসিহত কারী এবং নওহা খানদের জন্য এক বিশেষ বার্তা প্রকাশ করা হয়েছিল, যা উর্দু ভাষায় সম্প্রচার করা হয়, আর এখানে পাঠকদের সুবিধার্থে বঙ্গানুবাদ করে তা সম্প্রচার করা হচ্ছে।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা :
সমাজে আধ্যাত্মিক, শিক্ষাগত এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলি খুবই প্রয়োজন, এবং এর জন্য ধর্ম প্রচারকের কাছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিষয় সংগ্রহ থাকা অত্যাবশ্যক, যা শ্রোতাদের মধ্যে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য দিকনির্দেশনা এবং কিছুটা হলেও অন্যান্য মানুষদের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
খতিবকে সময় উপযোগী সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে :
অর্থাৎ প্রতিবছর যে মতবাদমূলক সন্দেহ দেখা দেয়, প্রতিটি সমাজের পরিবর্তিত রীতিনীতি ও ঐতিহ্য এবং মোমিনদের উপর আগামী যুগের সমস্ত প্রকারের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খতিবদেরকে সচেতন হওয়া উচিত। নতুন ধারণা বা অভ্যাস বা সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এগুলো হোসায়নী মিম্বারের প্রতি এক নতুন ধরনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যা খুবই কার্যকরী এবং সফলকামও।
কুরআন শরীফের আয়াত, সহীহ গ্রন্থ থেকে বর্ণনা মূলক এবং প্রমাণিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণের সময়ে অত্যন্ত সতর্ক মূলক ভাবে তা বর্ণনা করা উচিত। কারণ বর্ণিত রেওয়ায়েত বা ঘটনার উৎসগুলি সতর্কতার সাথে বর্ণনা না করার ফলে শ্রোতাদের মন থেকে হোসায়নী মিম্বারের মর্যাদা হ্রাস পেতে থাকছে।
মিম্বার থেকে অবাস্তব স্বপ্ন এবং কাল্পনিক ঘটনা বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যা মিম্বারের মর্যাদা ও পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। আর এর ফলে এটা প্রকাশ হয় যে, মিম্বার একটি অকেজো সম্প্রচার মাধ্যম যা শ্রোতাদের সংস্কৃতি এবং মানসিক উন্নতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া :
খতিবের উচিত, যে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি আলোচনা করতে চান তার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। যে কোন বিষয়ে বক্তৃতার শ্রেণী বিন্যাস, বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভক্ত, বর্ণনা খুবই স্পষ্ট, মসৃণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। খতিবের বিষয়গুলির প্রতি প্রস্তুতি, বক্তৃতার শ্রেনী বিন্যাস এবং আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করা এগুলো মিম্বারে হোসায়নীর সাথে শ্রোতাদের আবেগী এবং মানসিক সংযুক্ত গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
আহলেবায়েত (আঃ) থেকে পাওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য সবগুলো অত্যন্ত মহান এবং সুন্দর, কিন্তু এটা খতিবের দক্ষতা ও যোগ্যতার উপর নির্ভর করে যে, তাঁর থেকে এমন হাদিস ও রেওআয়েত বর্ণিত হোক যা বিভিন্ন ধর্ম, বুদ্ধিবৃত্তিক উৎস এবং সমাজের সাথে সম্পর্কিত সর্বস্তরের মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে। এটাই হল আহলেবায়েত (আঃ)-এর বক্তব্যের সৌন্দর্য, যার মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের কথা বলা এবং তার প্রতি যেন বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতিটি জাতি আকৃষ্ট হতে থাকেন।
সমাজের মধ্যে যে সমস্যাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে তার সফল চিকিৎসা ও উপায় মিম্বার থেকে বর্ণনা করা উচিত। খতিবের জন্য পারিবারিক বিরোধ, নতুন ও পুরাতন প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধান, বিবাহ বিচ্ছেদের সমস্যা ইত্যাদি বর্ণনা করা যথাযথ নয়, তার কোন সমাধানের কথা উল্লেখ না করে। কোন সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ না করে ওই সমস্যার ব্যাখ্যা করা মিম্বারের কার্যকরী রূপান্তরের ভূমিকার পরিবর্তে ঐ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্ম দেয়। খতিবদের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে ওই বিষয়ে সামাজিক সমস্যার সফল সমাধান নির্ধারণ করা উচিত, যাতে প্রতিটি সমস্যা নিয়ে আলোচনার সাথে তার সফল সমাধানও বর্ণিত হতে পারে। আর এর সাথে হোসায়নী মিম্বার স্থবির অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে সমাজের সংস্কার ও সভ্যতায় একজন কার্যকরী নেতা হতে পারে।
হোসায়নী মিম্বার থেকে শিয়াদের মধ্যে থাকা মতবিরোধের কথা উল্লেখ না করা উচিত। তাই ওই মতবাদ গুলি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত হোক বা ইসলামী প্রতীকের সাথে সম্পর্কিত। কারণ এর ফলে এই মিম্বার একটি দলের জন্য বিবেচনা করা হবে অন্য দলের জন্য নয়। অথবা এর ফলে সম্মিলিত ফেৎনা সৃষ্টি হবে বা মোমিনদের মধ্যে কলহ বা দলাদলি সৃষ্টি হবে। হোসায়নী মিম্বার সংহতির পতাকা এবং হোসায়নী নূরের প্রতীক, যা শহীদ সম্রাট ইমাম হোসায়েন (আঃ)-এর প্রেমিকদের হৃদয় একই পথে এক অপরকে সহযোগিতা করার জন্য একত্রিত করে।
এবাদত ও বানিজ্যিক বিষয়গুলি সম্পর্কে যা সাধারণভাবে মানুষের প্রয়োজন তা মিম্বার থেকে ব্যাখ্যা করা উচিত।
মিম্বার থেকে দ্বীনি মুজতাহিদ, হাওয়া-এ- ইলমিয়া (ধর্মীয় ভূখণ্ড) এবং আলেমদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা উচিত। কারণ এর মধ্যেই রয়েছে শিয়া ধর্মের শক্তির রহস্য, মহত্ত্বের প্রতীক এবং গৌরবের শিখর।
অনুবাদ: মাসুম আলী গাজী (নাজাফ ইরাক)